বুটেক্সে দীর্ঘদিনের যানবাহন সংকট নিরসনে প্রশাসনের উদ্যোগ

বুটেক্সে দীর্ঘদিনের যানবাহন সংকট নিরসনে প্রশাসনের উদ্যোগ

বুটেক্স প্রতিনিধি-

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পার হলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়টির যানবাহন বিভাগে বিভিন্ন সমস্যা চোখে পড়ে। পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাব, নির্দিষ্ট বাজেট না থাকা, লোকবলের সংকটসহ নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত এ বিভাগ। তবে বর্তমান প্রশাসন এসব সমস্যা সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক নিজস্ব বাস রয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ যানবাহন বিভাগ চলে। সেখানে যথেষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ থাকে, থাকে গাড়ি মেরামত ও পার্কিংয়ের জন্য আলাদা গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের একটি অংশ যানবাহন খাতেও বরাদ্দ থাকে। কিন্তু বুটেক্সে পরিস্থিতি ভিন্ন।

বুটেক্সের যানবাহন বিভাগে রয়েছে তীব্র লোকবল সংকট। যেখানে ন্যূনতম ৯টি পদের প্রয়োজন, সেখানে বর্তমানে মাত্র ১টি পদ রয়েছে। বিভাগে প্রয়োজন একজন পরিচালক, দুইজন সেকশন অফিসার, একজন যন্ত্র প্রকৌশলী ও সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী, একজন মেকানিক ও সহকারী মেকানিক এবং দুজন সহকারী কর্মচারী। অথচ বুটেক্সে কেবল একজন যানবাহন কর্মকর্তা পুরো বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন।

অবকাঠামোগত সংকটও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো গ্যারেজ, যন্ত্রাংশ সংরক্ষণের জন্য আলাদা রুম, গাড়ি পরিষ্কারের জন্য পানি লাইন বা কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী, রয়েছে হেল্পারের ঘাটতিও। যন্ত্রাংশ রাখতে হয় পরিবহন কর্মকর্তার কক্ষে, যা নানা অসুবিধার সৃষ্টি করে।

বর্তমানে বুটেক্সে শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য দুটি নিজস্ব বাস ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে একটি বাস সম্প্রতি মেরামত শেষে অনুমোদন পেয়ে বুটেক্স–গুলিস্তান রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। তবে পর্যাপ্ত নিজস্ব বাস না থাকায় বিআরটিসি থেকে ভাড়া করা বাসে শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবা দিতে হচ্ছে। এসব বাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগও রয়েছে। প্রায়ই বাস বিকল হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। পাশাপাশি বিআরটিসি বাসের মাসিক ব্যয় নিজস্ব বাসের তুলনায় অনেক বেশি বলেও জানা গেছে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “আগে তন্তু বাস নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চললেও এখন কেবল সাইনবোর্ড পর্যন্ত আসে। এতে আমাদের ভোগান্তি হয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দিনে একাধিকবার চললেও বুটেক্সের বাস ক্যাম্পাস থেকে মাত্র একবার ছাড়ে, ফলে ক্লাসের সময়ের সঙ্গে সময় মিলাতে সমস্যা হয়।”

ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসনাবুল মাহদিন তাহিন বলেন, “পুরান ঢাকার দিক থেকে কোনো রুট না থাকায় ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে আসতে হয়। সকালে সময়মতো বাস না পেয়ে অনেককেই বিকল্পভাবে যাতায়াত করতে হয়, যা বেশ ঝামেলাপূর্ণ ছিল। নতুন রুটের বাস চালু হওয়ায় এখন কিছুটা সুবিধা হয়েছে।”

যানবাহন কর্মকর্তা ড. মো. মুরাদ আহমেদ বলেন, “লোকবল সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছি না। নতুন বাসটির জন্য একজন হেল্পার নিয়োগ জরুরি। যন্ত্রাংশ রাখার জন্য একটি আলাদা রুম প্রয়োজন। এসব সীমাবদ্ধতা দূর হলে আরও উন্নত সেবা দিতে পারব।”

বিআরটিসি বাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অভিযোগগুলো বিআরটিসিকে জানিয়েছি। তারা ইতিমধ্যেই ত্রুটিযুক্ত বাসটি মেরামত করেছে। পাশাপাশি উপাচার্য স্যার বাস বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি নতুন বাসের আশ্বাস দিয়েছেন।”

বুটেক্সের বর্তমান প্রশাসন যানবাহন খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মধ্যেই দুটি নিজস্ব বাস শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে যানবাহন সংক্রান্ত তথ্য সংযোজন করা হয়েছে।

বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দীন বলেন, “গত পনেরো বছরে যে অল্প উন্নয়ন হয়েছে, তার তুলনায় গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দুটি নিজস্ব বাস উদ্ভোধন করে নতুন রুটে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আরও বাস যুক্ত হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধা বিবেচনায় ওয়েবসাইটে ট্রান্সপোর্ট সেকশন খোলা হয়েছে এবং এটি হালনাগাদ করা হচ্ছে।”

লোকবল সংকট ও গ্যারেজের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, “লোকবল সংকট দূরীকরণে আমরা কাজ করছি। আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। আপাতত গ্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেই তাই নতুন বাস যুক্ত হলে খালি জায়গায় রাখা হবে।”

তিনি আরও জানান, “প্রতি ট্রিপে শিক্ষার্থীদের যে ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়, তা খুব শিগগিরই বন্ধ করা হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *