শুভ জন্মদিন তারেক রহমান

শুভ জন্মদিন তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৬৫ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বর্তমান চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমান। গত বছরের মতো এবারও তার জন্মদিনে কেক কাটাসহ কোনো ধরনের অনুষ্ঠান বা উৎসব করবে না দলটি।

গত মঙ্গলবার বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী দল ও সহযোগী সংগঠনের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা, পোস্টার বা ব্যানার লাগানো, আলোচনা সভাসহ কোনো ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান বা উৎসব পালন করা যাবে না।

জরুরি অবস্থার মধ্যে কারামুক্ত হয়ে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান তারেক রহমান। এর পর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেখান থেকেই ভার্চুয়ালি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

ওয়ান-ইলেভেনের সরকার এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শখানেক মামলা দিয়েছিল। বিএনপির দাবি, এসব মামলা মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় দণ্ড হয় তারেক রহমানের। তবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ায় একে একে সব মামলা থেকেই মুক্ত হন তিনি। বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় রয়েছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ঘোষিত দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারেক রহমান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর দেশে ফিরবেন তিনি।

তারেক রহমানের শৈশব শুরু হয় একটি বিনয়ী পরিবেশে যেখানে সরল জীবনযাপন ছিল তার পরিবারের মূলমন্ত্র। স্কুলে যাওয়ার বয়সে, তার বাবা-মা তাকে ঢাকা সেনানিবাসের শাহীন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন, যা তখন একটি ইংরেজি-মাধ্যমিক স্কুল ছিল, যেখানে কেবল সেনা সদস্যদের সন্তানদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

তিনি তার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। শিক্ষার উচ্চতর স্তরে তার যাত্রা শুরু হয় দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য, তিনি তার প্রিয় বিষয় হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে (আইআর) লেখাপড়া করেন।

নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি, তারেক রহমান ধৈর্যের সঙ্গে সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, হবস, লক, রুশো, ভলতেয়ার, কার্ল মার্কস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাবিদদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার গভীরে প্রবেশ করেছিলেন।

তারেক রহমান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, এক অত্যন্ত অস্থির পরিস্থিতিতে যখন তার মা বেগম খালেদা জিয়া এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের সময় রাষ্ট্র ও রাজনীতির তাত্ত্বিক ভিত্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকায় তারেক রহমান সহজাতভাবে তার মা পরিচালিত গণআন্দোলনের পরিবেশে রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন।

তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলায় প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির সদস্য হন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি তার দলের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেন।

দলের জাতীয় প্রচারণা কৌশল কমিটির সদস্য হিসেবে, তারেক রহমান তার মা যে পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন, তার নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয় সাধন করেছিলেন। পাঁচটি আসনেই তার (বেগম খালেদা জিয়া) বিশাল জয় প্রমাণ করে যে তিনি (তারেক রহমান) একজন সূক্ষ্ম সংগঠক হিসেবে ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম।

কিন্তু, পরবর্তীতে তিনি ওয়ান-ইলেভেন সরকারের নির্যাতনের শিকার হন। সেনা-সমর্থিত অবৈধ ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক একাধিক নিষ্ঠুর এবং ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার হন। কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়।

তারেক রহমান সম্পূর্ণ কাঠামোগত সংস্কারের ধারণাটি তুলে ধরেন কারণ দেশটি প্রায় ১৬ বছর ধরে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই শাসনরত একটি স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে গুরুতর দুঃশাসন এবং অপশাসনে আবদ্ধ ছিল।

ইতোমধ্যেই জনসমর্থন অর্জন করা, তার ৩১-দফা দেশ সংস্কার পরিকল্পনা সমগ্র নির্বাহী, বিচার বিভাগ এবং আইনসভা শাখাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। মহৎ প্রত্যাশা এবং ধারণায় পরিপূর্ণ তারেক রহমান এমন একটি জাতির স্বপ্ন দেখেন যেখানে প্রতিটি নাগরিক মর্যাদা ও সমৃদ্ধির সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করবে। এবং ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর তার মাতৃভূমিকে আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করা যেখানে প্রতিটি নাগরিক তাদের অবিচ্ছেদ্য মৌলিক অধিকার ভোগ করবে।

তিনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে জলবায়ু-সহনশীল জাতিতে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন। তিনি বিশ্ব উষ্ণায়ন বন্ধ করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিশাপ থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করার স্বপ্ন দেখেন।

তারেক রহমান একটি যোগ্যতা-ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন এবং বিশ্ব মূলধারার সঙ্গে থাকতে চান।

তার মাতৃভূমিতে বিজয়ী প্রত্যাবর্তন এখন সময়ের ব্যাপার। সমগ্র জাতি তা শীঘ্রই দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *